উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩/০৪/২০২৩ ৮:১৭ এএম
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নিজেরা যে নিয়ন্ত্রিত জীবনে পড়বেন তা জানতেন না বৃদ্ধ নুর জাহান। ছবিটি কুতুপালংস্থ লম্বাশিয়া এলাকা থেকে তোলা।

সুজাউদ্দিন রুবেল ::
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেষ্টনীতে আটকে আছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দার জীবন। রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে গিয়ে চলা-ফেরায় প্রতিবন্ধকতার মুখে তারা। তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন নানা সমস্যার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নানান অপরাধ কর্মকান্ডে আতংকিত তারা। এতে তাদের কাটছে দূর্বিষহ জীবন। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।

# রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপসারণ করার দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের
# নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয়রাও যাচাইয়ের আওতায়: এপিবিএন

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কুতুপালং। এ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে লম্বাশিয়া গ্রামে অসুস্থ স্বামীকে সাথে নিয়ে বাস করে নুর জাহার নামের এক বৃদ্ধা। এই নারী তাদের জীবনের কোন স্বাধীনতা আছে বলে বিশ্বাস করেন না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে তাদের জীবন বন্ধি হয়ে গেছে কাঁটাতারের বেষ্টনীতে। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে যেতে পথে পথে তল্লাশী চৌকি, প্রশ্নের কারণে নানা জটিলতায় রয়েছেন। নিজের জমির ফসল আনতে যাওয়া ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। এর সাথে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মারা-মারি, খুন সব মিলিয়ে চরম আতংকের জীবন যাপন করছেন তারা ২ জন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এমন পরাধীন জীবন যাপন করতে হবে কল্পনাই করেননি এ নুর জাহার।

একই এলাকার নাজির হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার কারণে কাঁটাতারের বেষ্টনী দেয়াটা জরুরী ছিল। কিন্তু এটা কবলে বন্দি জীবনে পড়েছেন তারা। অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, সংসারের কেনা-কাটা করতে যাওয়া জন্য দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। গাড়ি ঘর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে এপিবিএন এর প্রশ্নের হাজারও উত্তর দিতে হচ্ছে।
নাজির হোসেন বলেন, তার মেয়ে অনার্স পাস করে ঘরে আসে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিয়ের প্রস্তাব আসলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে না পারার অজুহাতে বিয়ে হয়নি। তিনি জানান, স্থানীয় পরিবার গুলো ঘিরে রোহিঙ্গা ঘরগুলো সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্য চলা-ফেরার সহজ পথ তৈরী করা জরুরী।
একই এলাকার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রায়হান জানান, আগে যে রাস্তা ব্যবহার করে তারা স্কুলে যেতেন এখন ওই রাস্তা বন্ধ। প্রায় আধা ঘন্টা রাস্তা ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে পথে পথে তল্লাশী। যার কারণে মাঝে মধ্যে ঠিক সময় বিদ্যালয়ে পৌছাতে পারি না। এতে পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে।
একই ভাবে রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্ত ৪ শত পরিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেষ্টনীতে বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন।
তিনি জানান, এ ৪ শত পরিবারের মানুষ চলা-ফেরা, জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়া, চিকিৎসা, কেনা-কাটায় প্রতিবন্ধকতায় রয়েছে। তাই স্থানীয়দের বসবাসরত গ্রাম থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় পরিবারগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আলাদা করে নেয়া জরুরী। রোহিঙ্গাদের সরিয়ে বা ক্ষেত্রে বিশেষে কিছু স্থানীয় পরিবারকে সরিয়ে এমন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
শুধু রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প না; কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি ক্যাম্পের অন্তত ১২’শো পরিবারের স্থানীয় বাসিন্দারা কাঁটাতারের বেষ্টনীতে চলা-ফেরায় প্রতিবন্ধকতার মুখে রয়েছেন। যাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ হাজারের বেশি।
তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নানান অপরাধ কর্মকান্ডে আতংকিত তারা। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নটির ব্যাপক এলাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্প। যেখানে কাঁটাতারের বেষ্টনীর কবলে রয়েছে স্থানীয় সাড়ে ৩ শত পরিবার। এদের চলা-ফেরার জটিলতা নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হয়। কিন্তু কার্যত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এর জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন এর কর্মকর্তাও। ৮ এপিবিএন এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য বেষ্টনী এবং তল্লাশী চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে স্থানীয় পরিবার থাকার কারণে ক্যাম্প থেকে বের হতে চেকপোষ্টে এপিবিএনের সঙ্গে কথা কাট-কাটি হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয়রাও যাচাইয়ের আওতায় পড়েছে। এ নিয়ে সাময়িক অসুবিধা হলেও নিরাপত্তার জন্য তা জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, কাঁটাতরের বেষ্টনীতে কিছু স্থানীয় পরিবার বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ওখানে সাময়িক কিছু অসুবিধা রয়েছে বলে নানাভাবে জানা গেছে। এব্যাপারে স্থানীয়রা লিখিতভাবে আবেদন করেছেন কিনা জানা নেই। তবে স্থানীয়দের সরানো সম্ভব না। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের কিভাবে আলাদা করা যায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে ১২ লাখের মতো মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা। আর স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ৪ লাখের মতো। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

সেন্ট মার্টিনে জাহাজ ঢুকতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দ্বীপবাসীর

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ এবং ভ্রমণ সীমিতকরণের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে ...

উখিয়ার সোনার পাড়া হাটেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ লাখ টাকার সুপারি, খুশি চাষিরা

আব্দুল কুদ্দুস,কক্সবাজার কক্সবাজারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে সুপারির। ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্প মুখি নয়, কলেজ মুখি হতে হবে শিক্ষার্থীদের-শাহজাহান চৌধুরী

নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় মেধা প্রস্ফুটিত হয়। উচ্চ শিক্ষায় অভিভাবক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে আগামীর সুন্দর ...